জেলা প্রতিনিধি, যশোর: এনজিও ঋণের টাকায় ভ্যান চালিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন জিয়াউল ইসলাম (৬৫)। তার একমাত্র মেয়েটি অনেক আগেই রোগে মারা গেছে।
তবে, একমাত্র ছেলেটি বাবার মতো ভ্যান চালিয়ে আয় করলেও কয়েকমাস ধরে অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষম নই। এর কারণে শরীরে শক্তি না থাকলেও মনের শক্তি নিয়েই মোটর ভ্যান চালিয়ে সপ্তাহে ১৩ শ টাকা ঋণের কিস্তি দিয়ে স্ত্রী, ছেলে-পুত্রবধূ ও এক নাতির সংসারের ঘানি টানছিলেন, আর বসতবাড়ি বলতে একমাত্র কুঁড়ে ঘরেই বসবাস বৃদ্ধ জিয়াউল ইসলামের।
তারপরও, বিধিবাম! ঝিকরগাছা উপজেলার হাজের আলী গ্রাম থেকে আয়-রোজগারের আশায় পৌর শহরে ভ্যান চালাতে এসে দুই ভদ্রবেশি দুর্বৃত্তের টার্গেটের শিকার হন গ্রামের সহজ-সরল মনের ওই বৃদ্ধ।
তিনি বলেন, ১৭ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা পৌরশহরে ভ্যান চালাতে এলে ভদ্রলোক বেশের দুই ব্যক্তি যশোর শহরে পাইকারি কাপড় কিনতে আসার কথা বলে তাকে ভাড়ায় নিয়ে আসেন। এরপর সার্কিট হাউজের সামনে এসে একজন যাত্রী ভ্যানের ওপরে বসে থাকেন অপরজন বৃদ্ধ চালককে একটি কাগজের স্লিপ দিয়ে বলেন, আমাদের মাল কেনা আছে এই কাগজ নিয়ে অপর যাত্রীর সাথে পাশের গলির দোকানে গিয়ে কাপড়ের গাইটগুলো (বান্ডিল) নিয়ে আসতে বলেন। সরল মনেই তিনি ভ্যান রেখে ওই যাত্রীর সাথে সাইডে যাওয়া মাত্রই তিনি মোটরসাইকেলে চম্পট দেন, এ সময় আঁচ করতে পেরে দৌড়ে ভ্যানের কাছে এসে দেখেন অপরযাত্রীসহ তার ভ্যানটিও নেই।
একমাত্র সম্বল ভ্যানটি হারিয়ে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ জিয়াউল কান্নাকাটি করে আশেপাশের লোকজনকে জানান। তবে, স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়, পুলিশও আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নানাভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
পরে মানবিক বিষয়টি যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলামের দৃষ্টিতে আনা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর সচ্ছলতা নিয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং জেলা প্রশাসনের এনডিসিকে সহযোগিতার নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, এনডিসি হিল্লোল চাকমা সরকারি সহযোগিতা এবং বৃদ্ধের যৎসামান্য টাকা দিয়ে সমন্বয় করে একটি ভ্যান কিনে ওই বৃদ্ধের হাতে তুলে দেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) ভ্যানটি পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ জিয়াউল ইসলাম। এ প্রতিবেদকের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এটা আমার কাছে শুধুমাত্র ভ্যান নয়, নতুন জীবন! ডিসি স্যার এ সহযোগিতা না করলে কি হতো সেটা আমার পরিবার ও আমি ভালো জানি। যতদিন বাঁচবো স্যারের জন্য দোয়া করব।